এক ভাইয়ের প্রশ্ন। তিনি প্রশ্ন করেছেন-“আমি একজন অবিবাহিত পুরুষ। আমি কি কোনো বিবাহিত ডিভোর্সী মেয়েকে বিবাহিত করতে পারবো? শরিয়ত মোতাবেক রেফারেন্স সহ জানতে চাই।

হ্যাঁ, একজন অবিবাহিত পুরুষ ইসলামের দৃষ্টিতে কোনো বিবাহিত (ডিভোর্সী) নারীকে বিবাহ করতে সম্পূর্ণরূপে বৈধ। ইসলামে বিয়ের ক্ষেত্রে নারী বা পুরুষের বৈবাহিক অবস্থা (অবিবাহিত, বিধবা, বা তালাকপ্রাপ্ত) কোনো শর্ত নয়, বরং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো উভয়ের সম্মতি, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা, এবং ন্যায়সঙ্গত উপায়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া।

শরিয়ত মোতাবেক দলিল ও রেফারেন্স:

১. কুরআনের দলিল

আল্লাহ তাআলা বলেন:
“তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত, তাদের বিবাহ সম্পাদন করো এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্য থেকে যারা সৎ তাদেরও। যদি তারা গরীব হয় তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ তো প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।”
(সূরা আন-নূর: ৩২)

এই আয়াতে কোনো বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত নারীকে বিয়ে করা নিষিদ্ধ করা হয়নি, বরং মুসলিমদের মধ্যে বিবাহকে উৎসাহিত করা হয়েছে।

২. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদর্শ

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজেও প্রথম বিবাহ করেছিলেন একজন বিধবা নারী খাদিজা (রাঃ)-কে, যিনি এর আগে দু’বার বিবাহিত ছিলেন।

এছাড়াও তিনি তালাকপ্রাপ্ত নারীদেরও বিবাহ করেছেন, যেমন হযরত হাফসা (রাঃ), যিনি তালাকপ্রাপ্ত ছিলেন।

এটি প্রমাণ করে যে, একজন অবিবাহিত পুরুষ কোনো তালাকপ্রাপ্ত নারীকে বিয়ে করতে পারে এবং এতে কোনো বাধা নেই।

৩. সাহাবাদের আমল

ইসলামের ইতিহাসে বহু সাহাবি তালাকপ্রাপ্ত ও বিধবা নারীদের বিয়ে করেছেন এবং এটি সামাজিকভাবে স্বীকৃত ছিল।

উপসংহার:

ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী, একজন অবিবাহিত পুরুষ তালাকপ্রাপ্ত (ডিভোর্সী) নারীকে বিয়ে করতে পারে।
এটি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সুন্নাতের মধ্যে পড়ে এবং এতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
কুরআন ও হাদিস অনুযায়ী বিবাহের ক্ষেত্রে মূল শর্ত হলো—উভয়ের সম্মতি, ইসলামি বিধান মেনে চলা এবং সামাজিক ও পারিবারিক কল্যাণ নিশ্চিত করা।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং উত্তম জীবনসঙ্গী নির্বাচনের তাওফিক দান করুন। আমীন।



সামাজিক ও পারিবারিক দৃষ্টিকোণ থেকে ডিভোর্সী নারীকে বিয়ে করার অবস্থান (শরিয়ত মোতাবেক বিশ্লেষণ ও রেফারেন্সসহ)

১. ইসলামে ডিভোর্সী নারীর সম্মান ও বিবাহের অনুমোদন

ইসলাম বিবাহবিচ্ছিন্ন বা বিধবা নারীদের প্রতি সম্মানজনক আচরণ করতে এবং তাদের পুনরায় বিবাহের সুযোগ করে দিতে উৎসাহিত করেছে। সমাজে অনেক সময় তালাকপ্রাপ্ত বা বিধবা নারীদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব দেখা যায়, কিন্তু ইসলাম এই দৃষ্টিভঙ্গিকে নাকচ করে দিয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন:
“যারা স্ত্রীদেরকে তালাক দেয়, তারপর তাদের (স্ত্রীদের) ইদ্দতকাল শেষ হয়ে যায়, তখন তাদেরকে যথাযথভাবে রেখে দাও অথবা সুন্দরভাবে বিদায় দাও। অন্যায়ভাবে তাদেরকে কষ্ট দেওয়ার জন্য তাদেরকে আটকে রেখো না। যে এমনটি করে, সে নিজেরই ক্ষতি করে।”
(সূরা আল-বাকারা: ২৩১)

“আর যদি তারা (তালাকপ্রাপ্ত নারীরা) স্বীয় স্বামীদের সাথে পুনরায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে সম্মত হয়, তবে তোমরা তাদেরকে (বিয়ে করতে) বাধা দিও না।”
(সূরা আল-বাকারা: ২৩২)

এই আয়াতগুলো থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, তালাকপ্রাপ্ত নারীদের পুনরায় বিবাহের পূর্ণ অধিকার রয়েছে, এবং সমাজ তাদেরকে বাধা দিতে পারে না।


২. রাসূল (সাঃ)-এর আদর্শ ও সাহাবিদের দৃষ্টিভঙ্গি

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তালাকপ্রাপ্ত ও বিধবা নারীদের সম্মান দিতেন এবং নিজেও তাদেরকে বিবাহ করেছেন।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর বিবাহিত নারীদের মধ্যে বেশিরভাগই বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত ছিলেন।
যেমন:

  • হযরত খাদিজা (রাঃ) – তিনি ছিলেন বিধবা।
  • হযরত হাফসা (রাঃ) – তিনি তালাকপ্রাপ্ত ছিলেন।
  • হযরত যয়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) – তিনি তালাকপ্রাপ্ত ছিলেন।
  • হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) – তিনি বিধবা ছিলেন।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজেই বিধবা ও তালাকপ্রাপ্ত নারীদের বিয়ে করে সমাজে তাদের মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাই ইসলামি সমাজেও তাদের প্রতি সম্মানজনক মনোভাব পোষণ করা উচিত।


৩. সামাজিক ও পারিবারিক দৃষ্টিকোণ থেকে ডিভোর্সী নারীকে বিয়ে করা কেমন?

(ক) ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি

ইসলাম পুনরায় বিবাহকে উৎসাহিত করেছে।
একজন ডিভোর্সী নারী অনেক অভিজ্ঞ এবং সম্পর্ক পরিচালনায় পরিপক্ব হতে পারেন।
এতে সমাজে তালাকপ্রাপ্ত বা বিধবা নারীদের প্রতি সম্মান বৃদ্ধি পায়।
একটি সুখী পরিবার গঠনের মাধ্যমে সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা হয়।

(খ) সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও ইসলামের উত্তর

❌ অনেক সমাজে তালাকপ্রাপ্ত বা বিধবা নারীকে দ্বিতীয়বার বিয়ে করাকে খারাপ চোখে দেখা হয়, যা ইসলামসম্মত নয়।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন:
“তোমরা নারীদের প্রতি সদয় হও, কারণ তারা তোমাদের সহযোগী।” (সহিহ বুখারি: ৫১৮৫)

এ থেকে বোঝা যায় যে, সমাজে তালাকপ্রাপ্ত বা বিধবা নারীদের অবহেলা করা ইসলামের দৃষ্টিতে অন্যায়। বরং তাদের প্রতি সদয় আচরণ ও পুনর্বিবাহের সুযোগ করে দেওয়া উচিত।


৪. তালাকপ্রাপ্ত নারীর পুনরায় বিয়ে সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা করে

আল্লাহ বলেন:
“তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিয়ে সম্পন্ন করো এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও। যদি তারা গরীব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দেবেন।”
(সূরা আন-নূর: ৩২)

এতে বোঝা যায় যে, ইসলাম পুনরায় বিয়ে করাকে উৎসাহিত করেছে, যা সমাজের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


উপসংহার:

✅ ইসলামে একজন অবিবাহিত পুরুষের জন্য তালাকপ্রাপ্ত বা বিধবা নারীকে বিয়ে করা সম্পূর্ণ বৈধ এবং উৎসাহিত করা হয়েছে।
✅ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজে বিধবা ও তালাকপ্রাপ্ত নারীদের বিয়ে করেছেন, যা সমাজের জন্য দৃষ্টান্ত।
✅ সামাজিক নেতিবাচক মনোভাব ইসলামের শিক্ষার বিপরীত এবং এটি পরিত্যাজ্য।
✅ ডিভোর্সী বা বিধবা নারীকে বিয়ে করা শুধু একজন ব্যক্তির জন্য নয়, বরং পুরো সমাজের জন্য কল্যাণকর।

সুতরাং, কোনো অবিবাহিত পুরুষ যদি একজন তালাকপ্রাপ্ত নারীকে বিয়ে করতে চায়, তবে এটি অত্যন্ত সম্মানজনক ও ইসলামসম্মত কাজ।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সত্য বুঝার এবং সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার তাওফিক দান করুন। আমীন!

Loading

© | LION LOKMAN RAKIB |
Developed BY LIONLR